বাংলাদেশে ছাদ বাগানের টবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির ত্বীন ফল। সারা বছর ধরে ব্যাপক ফলন হওয়ায় দেশ জুড়ে ফল চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে ত্বীনের প্রতি। বাংলাদেশে মূলত একে সবাই ডুমুর নামেই চেনে।
সহজলভ্য ও দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ পরিসরে চাষ হচ্ছে ত্বীন ফলের। তাছাড়া পবিত্র কোরআন শরীফে ত্বীন ফলের উল্লেখ থাকায় অনেকেই এই ফল চাষে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসছেন।
কেমন দেখতে এই ত্বীন ফল
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, ভারত, তুরস্ক ও জর্ডানে আঞ্জির হিসেবে পরিচিত এই ফলের গাছটি ৬ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল ধরে পাতার গোড়ায় গোড়ায় একটি করে। কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে একটি গাছে। ফল আসার সময় সবুজ রঙের হয়ে থাকে বারো মাসী এই ফল গাছটি। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে জাত ভেদে লালচে, বাদামি, খয়েরি, হলুদ, গোলাপি রং ধারণ করে। আকারে সাধারণত এগুলো দেশীয় ডুমুরের থেকে বড় হয়। আর পাঁকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়ে যায়। ওজনে সাধারণত ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসালো হয় একটি পরিপক্ক ত্বীন ফল। আঁটি ও বিচিহীন দৃষ্টিনন্দন এই ফল আবরণসহ খাওয়া যায়।
টবে ত্বীন চাষ পদ্ধতি
কোনও রকম রাসায়নিক সার ছাড়াই, শুধুমাত্র মাটিতে জৈব ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে ছাদে টবে লাগিয়ে এই ফল উৎপাদন করা সম্ভব। কান্ড খুব নরম হওয়ায় কাটিং করে বংশবিস্তার এবং বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে, দুই ভাবেই চাষ করা যায়।
একটি ত্বীনের কাটিং বা কলম চারা রোপণ করার ৪ থেকে ৫ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে। তাই লাগানোর ২ থেকে ৩ মাস পর থেকেই টবের গাছে নিয়মিত অল্প পরিমাণে সরিষার খৈল পঁচা পানি দিতে হয়। ১২ মাস পর টবের আংশিক মাটি বদলাতে হয়। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে নতুন সার মেশানো মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। শীতের আগে ও বর্ষার শেষে টবের মাটি বদলে দেয়াটা ভালো। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা নেড়ে চেড়ে দিতে হয়।
বর্ষা ও শীতকালে মাঝে-মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তখন ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই অনুমোদিত মাত্রার বেশী নয়। দোআঁশ মাটি এ গাছের জন্য খুব ভালো, কারণ এ গাছে আছে জৈব উপাদান যেগুলো পানি নিষ্কাশনে বেশ উপযোগী। এ গাছকে এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে দিনে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা রোদ পড়ে।
আরও পড়ুন: সুস্থ থাকতে কলা নয়, খোসা খান
বাংলাদেশে ত্বীন চাষের সম্ভাবনা
ইতোমধ্যে যারা টবে ত্বীন চাষের সাফল্য পেয়েছেন তাদের মধ্যে সাতক্ষীরার সৌখিন ছাদবাগানী আসিফুর রহমান, গাজীপুরের মডার্ন এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন-এর প্রতিষ্ঠাতা আজম তালুকদার, রাজশাহীর দম্পতি শিহাব উদ্দিন ও শামীম আরা, খুলনার কৃষক নিউটন মন্ডল উল্লেখযোগ্য। পূর্বে ড্রাই ফুড হিসেবে আমদানী করা হলেও এখন এগ্রো ট্যুরিজম ও অর্গানিক বাগানে ত্বীন গাছ সুদূরপ্রসারী সমৃদ্ধি লাভ করছে।
প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি এভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বীন গাছ। এ গাছ বাঁচে প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই এ গাছ থেকে শতভাগ ফলন আসে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন তরমুজ বীজের উপকারিতা
পুষ্টিগত উপকারিতা বিবেচনায় ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে ত্বীন ফল খুবই কার্যকরী। এছাড়া উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বর্ধন, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়ে, মানসিক ক্লান্তি দূরীকরণে এ গাছ সহায়তা করে।
পরিশেষ
সুতরাং ত্বীন ফল চাষের ফলে দেশের বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। কেননা, কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষি নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সাথে বিদেশে ত্বীন রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।